COPD বা Chronic obstructive Pulmonary disease হচ্ছে এমন একটি শ্বাস-প্রশ্বাস ঘটিত সমস্যা যা বাংলাদেশ সহ বিশ্বে প্রচুর বাড়ছে, কিন্তু এই নীরব ঘাতকটি সম্পর্কে যাদের সচেতনতা অত্যন্ত কম। শ্বাস-প্রশ্বাসের সুস্থতার জন্য COPD সম্পর্কে জ্ঞান আহোরণ অতীব জরুরি।
COPD কি?
COPD এর পূর্ণরূপ হচ্ছে chronic obstructive pulmonary disease যা নিম্ন শ্বাসনালিতে ধূমপান এবং দূষণজনিত কারণে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে obstructive বলতে বুঝানো হচ্ছে যে শ্বাস নেয়ার সময় কোনো সমস্যা হবে না, কিনৃতু ব্যক্তি তখন শ্বাস ছাড়তে পারবে না। অর্থাৎ শ্বাস নিতে পারছে কিন্তু ছাড়তে সমস্যা, ফলস্বরূপ ব্যক্তি ভেতরে পেষণ অনুভব করে। তাই সর্বোপরি শ্বাসকষ্টই হয়।
pulmonary হচ্ছে ফুসফুস, তাই বায়ু মূলত ফুসফুসে আটকে যাবে, বের হতে পারবে না। chronic দ্বারা বুঝানো হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী একটা অবস্থা।
তাই যারা দূষণজনিত সমস্যায় ভোগে, বা দীর্ঘদিন সময় ধরে ধূমপান করে এবং ইনফেকশন হওয়ার কারণে ফুসফুসে প্রদাহ হয়ে অতিরিক্ত পাস জমে গিয়ে হয়। অতিরিক্ত পাস বা মিউকাস বা পুজ জমা হলে তা কাশির সাথে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন দুর্বলাবোধ এবং হাচিরও উদ্রেক ঘটে।
সর্বোপরি শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাপক সমস্যা হয়। ফুসফুসে ক্ষতি(damage হয়)। সাথে irritation ও ফুলেও যেতে পারে(swelling)
বাংলাদেশে COPD প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এতে শ্বাসকষ্ট সহ বহু জটিলতা দেখা দিতে পারে। |
সবচেয়ে সাধারণ দুইটি রোগ যেটা COPD দ্বারা বুঝায় তা হচ্ছে emphysema এবং chronic bronchitis.
Emphysema কি?
স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে বায়ু ফুসফুসের অ্যালভিওলাই এ শ্বসনতন্ত্রের মাধ্যমে যায় এবং গ্যাসীয় পরিবর্তন হয়। তার ফলেই আমরা O2 অক্সিজেন নিতে পারি। কিন্তু smoking বা ধূমপান এর ধোয়াতে যে irritant থাকে, সেটার কারণে অ্যালভিওলাই ফেটে যায় এবং সেখানে ফাকা জায়গার সৃষ্টি হয়। ঐ ফাকা জায়গায় বায়ুর আদান প্রদান সম্ভব হয় না। একে dead space বলে।
তখন স্বাভাবিকভাবেই ফুসফুসের একটা ক্ষতি হলো যার দরুণ শ্বাস নেওয়াতে সমস্যা হলো না, কিন্তু ঐ শ্বাস নেয়া বায়ু অ্যালভিওলাইতে আটকা পরে যায়( obstructed হয়ে যায়)। এটি COPD এর একটি কমন উদাহরণ এবং বাংলাদেশও প্রচুর এটি হয়ে থাকে।
chronic bronchitis কি?
ব্রঙ্কাস হচ্ছে ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালির পরবর্তী অংশ। এই ব্রঙ্কাসে যখন প্রদাহ হয় তাকে ব্রঙ্কাইটিস বলে। এখন এটি দীর্ঘদিন ধরে থাকলে সেটা হবে chronic bronchitis।
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে কিংবা কোনো দূষিত পদার্থ অথবা ধূমপান থেকে শ্বাসনালির পথে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। প্রদাহ সৃষ্টি হলে শ্বসনতন্ত্রের ঐ অংশে প্রচুর মিউকাস ক্ষরণ হয় এবং সেখানটা ফুলে যায়। সার্বিকভাবে দেখা যায় শ্বসনতন্ত্রের পথ সরু হয়ে গেছে। এছাড়াও ব্রঙ্কাসে যে ইলাস্টিক ফাইবার থাকে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইলাস্টিসিটি কমে যায়।
শ্বসনতন্ত্রের পথ সরু হয়ে যায় বলে বায়ু আটকে যায়। ফলে COPD হওয়া শুরু করে।
COPD এর দুইটি প্রকারভেদ বিদ্যমান। Health science |
কখন বুঝবেন আপনার COPD ধরা পড়েছে বা COPD এর লক্ষণ কি?( Symptoms of COPD)
COPD একদিনে হয়ে যায় না, এটা একটা দীর্ঘকালীন সমস্যা। ধীরে ধীরে এই পর্যায়ে রোগটি চলে যায়। তাই সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ আছে যেগুলোর সাহায্যে COPD শনাক্ত করা যেতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী সময় ধরে কাশি: সময়ে অসময়ে কাশি হবে এবং তা দীর্ঘসময় ধরে থাকবে।
শ্বাসকষ্ট হওয়া: সাধারণত শ্বাসকষ্ট বিশ্রামরত বা স্বাভাবিক কাজকর্মে হবে না। যখন পরিশ্রম করতে যাবেন তখনই দেখা যাবে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে থাকে। এইরকম কয়েকদিন যাবৎ চললে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি
শ্বাস নেয়ার সময় শব্দ হবে: শ্বাস-প্রশ্বাসে একটা অতিরিক্ত শক্তি দিয়ে হয় কেননা বায়ু শ্বসনতন্ত্রে আটকে যায়। তখন ঘর ঘর শব্দ হতে থাকে।
হাঁচি হয়।
বুকের ভেতর চাপ চাপ অনুভূত হয়।
সারা শরীরে আপনার অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। ফলে কোষে শক্তি উৎপাদন হচ্ছে না। দুর্বলতা অনুভব করবেন।
COPD হওয়ার কারণ?(common causes of COPD)
সংক্ষেপে জটিলতায় না গিয়ে COPD অন্যতম এবং প্রথম কারণ হচ্ছে ধূমপান। দীর্ঘসময় ধরে ধূমপান করার কারণে ধূমপানের ভেতর যে পদার্থ বা irritants থাকে সেগুলোই শ্বসনতন্ত্রে জমা হয়, শ্বসনতন্ত্রকে প্রদাহিত করে। COPD ঘটায়।
বায়ুতে উত্তেজক বা শ্বসনতন্ত্রে ক্ষতিকারী পদার্থের উপস্থিতিই COPD ঘটাবে। তাই দূষণযুক্ত এলাকায় বসবাস করলে COPD হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি।
আরো একটি কারণ হচ্ছে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ।
অনেক বিরল ক্ষেত্রে যদি antitrpsin-A না থাকে তাহলে genetically এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকের বেশি থাকে।
বাংলাদেশে COPD কেন বাড়ছে?(Why COPD is increasing in Bangladesh)
বাংলাদেশে সিগারেট খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়াই হচ্ছে COPD এর কারণ। এছাড়াও বাংলাদেশে দূষণমাত্রাও ব্যাপক হারে বাড়ছে। তাই বাংলাদেশীদের COPD হওয়ার মাত্রা ব্যাপক।
সিওপিডি প্রতিরোধ?(prevention of COPD)
স্বাভাবিকভাবেই ধূমপান, দূষণ এবং ইনফেকশন থেকে বাচলে এবং একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করলে COPD থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
সিওপিডি এর রোগ নির্ণয় যেভাবে করা হয়?
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে COPD রোগ একটি বুকের এক্স-রে এর মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে। যাদের COPD থাকে তাদের বুকের এক্স-রে তে কালো ছোপ বেশি দেখা যায়। অর্থাৎ radiolucent পাওয়া যাবে। কারণ ফুসফুসে অতিরিক্ত বায়ু বা হাওয়া আটকে গিয়েছে। তাই আমরা অধিক কালো বুকের X-ray পাবো। বাংলাদেশে এমনকি বুকের X-ray তেও এটি প্রচুর পাওয়া যায়।
তাছাড়াও স্পাইরোমেট্রির সাহায্যে সিওপিডি মাপা যেতে পারে। স্পাইরো মানে শ্বাস নেয়া এবং মেট্রি মানে মাপা, স্পাইরোমেট্রির সাহায্যে একটি যন্ত্রে একজন ব্যক্তি শ্বাস নিয়ে থাকে এবং তারপর ছেড়ে থাকে। তার শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে তার COPD আছে কিনা সেটা নির্ণয় করা হয়।
এছাড়াও CT test, pulse oximetry, রক্তে অক্সিজেন এবং কার্ব-ডাইঅক্সাইড ইত্যাদির মাত্রা নির্ণয় করে সিওপিডি মাপা সম্ভব।
সিওপিডি এবং অ্যাজমা?(COPD and asthma)
অ্যাজমাও সিওপডির মতো একটি অবসট্রাকটিভ(obstructive) রোগ অর্থাৎ আপনি শ্বাস সহজেই নিতে পারবেন কিন্তু শ্বাস ছেড়ে দিতে কষ্ট হবে। তবে COPD ও অ্যাজমার সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।
অ্যাজমা সাধারণত জেনটিক্যালি হয়, অর্থাৎ স্বল্প বয়সেও তা হতে পারে। জন্মগতভাবেই কারো কারো নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি অ্যালার্জি বা অ্যাজমা থাকে। কিন্তু সিওপিডি এর ক্ষেত্রে মূল কারণ হচ্ছে ধূমপান বা smoking করা। এই রোগটি সাধারণত ৪০ বছরের পর ধরা পরে।
COPD হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে কি খাওয়া যাবে না?(Foods to be taken during COPD)
খাবারের ক্ষেত্রে একসাথে পেট ভরে না খাওয়াই উত্তম।কারণ পেট ভরে খেলে পাকস্থলী (stomach) ভরে গিয়ে ডায়াফ্রাম এর ওপর চাপ পড়বে। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও, শ্বসনতন্ত্র থেকে যে মিউকাস প্রতিনিয়ত ক্ষরণ হচ্ছে সেটির পরিমাণ কমানোর জন্য প্রচুর পানি খেতে হবে।লবণ জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না, কেননা লবণ পানি ধরে থাকে।এতে শ্বাসে সমস্যা হতে পারে। সর্বোপরি ফল-শাক-সবজি এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যাতে ফুসফুস যথেষ্ট nutrition পায়।
কোক, সেভেন আপ জাতীয় ড্রিক খাওয়া যাবে না। এতে চিনি থাকে এবং ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। যেসব খাবার পরিপাক হতে বেশি সময় নেয় যেম- ফ্যাট জাতীয় গ্রিজি খাবার পরিহার করা উচিত। লবণ ও চিনি জাতীয় খাবার কম নেয়া।
পরিবর্তে বাদাম, ফল( আপেল, কমলা), গাজর, আনারস, আঙুর, শশা জাতীয় খাবার খেতে হবে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে সেসব খাবারও খেতে হবে।
সিওপিডি এর জটিলতা?(Complications of COPD)
এই রোগের যথাযোগ্য চিকিৎসা না হলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, বুকে ব্যাথা, হাড়ের দুর্বলতা, স্লিপ অ্যাপনিয়া ইত্যাদি জটিলতা বাড়ে।
প্রধানত ফুসফুসের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে সেই চাপ ডান দিকে সরে গিয়ে হার্টের ওপর বেশি প্রভাব পরে।
COPD রোগ কি সারানো যায়? এর চিকিৎসা ও ঔষধ কি?
সিওপডি রোগটি সারানো যায় না। সুন্দর লাইফ স্টাইলের মাধ্যমে সেটি ঠিক বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এখন কি ঔষধ নিতে হবে সোটি ডাক্তারই ভালোভাবে একজন রোগীকে প্রেসক্রাইব করে থাকে। সেসব ঔষধ শ্বসনতন্ত্রের পথ সরু থেকে প্রসারিত করবে, প্রদাহ কমাবে সেসব মেডিসিনই দেয়া হয়ে থাকে। যেমন-
Albuterol( ventolin,proair), Ipratropium,
tiotropium, ইত্যাদি।
সাথে অক্সিজেন থেরাপিও ভালো কাজে দিবে।
0 Comments