স্টাডি বলে প্রতি ৩৯ জন নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে তার মধ্যে ১ জন নারী মৃত্যুবরণ করবে। lung cancer বা ফুসফুসের ক্যান্সারের পর Breast ক্যান্সার সবচেয়ে ভয়াবহ নারীদের জন্য।
কেননা ফুসফুসে ক্যান্সারের পর ব্রেস্ট ক্যান্সারেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করে নারীরা। কত বছর বাচবে তা অনেকটাই নির্ভর করে ব্রেস্ট ক্যান্সার কোথায় হয়েছে এবং কোন স্টেজে তা শনাক্ত করা গিয়েছে।
Breast cancer একটি ভয়াবহ ক্যান্সার, তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। Health science |
NCI এর একটি গবেষণায় দেখা যায়, ৯০% শতাংশ নারী মাত্র ৫ বছর বাচে ব্রেস্ট ক্যান্সার(Breast Cancer) শনাক্ত হওয়ার পর। তাই ভয়াবহ এই বিষয় সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা জরুরি।
ব্রেস্ট ক্যান্সার কি? কেন হয়?( What is Brest Cancer and Why it happens?)
Breast হচ্ছে মূলত ফ্যাট টিস্যু। ব্রেস্টের মাঝখানের সামান্য নিচে রয়েছে নিপল এবং এর চারদিকে পিগমেন্টেড বা কালো-বাদামী রঙের জায়গাকে বলে অ্যারিওলা(areola)
বাকি পুরোটাই ফ্যাট। এবং ব্রেস্টে রয়েছে ব্যাপক লিম্ফ এর ড্রেইনেস( drainage)। মানে প্রচুর লসিকা থাকে।
এছাড়াও ব্রেস্টে নিপলের পিছনেই থাকে ল্যাকটিফেরাস ডাক্ট(duct) যা বহু টিউব ও লোবিউলে তা বিভক্ত হয়। ক্যান্সার মূলত এই টিউব জাতীয় অংশে বেশি ছড়ায় বা তৈরি হয় এবং তা লিম্ফ এর মাধ্যমে আরো ছড়িয়ে যায়।
ব্রেস্ট ক্যান্সার হচ্ছে ব্রেস্ট টিস্যু থেকে যে ক্যান্সার হয়। তখন ব্রেস্ট টিস্যু বা কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিত আকারে বৃদ্ধি পায়।ব্রেস্টে শক্ত দলা বা lump তৈরি হয়। সম্পূর্ণ স্তন শক্ত হওয়া বা শুধু মাত্র নিপল শক্ত হওয়া এবং তা পিছনে ভেতরে (retracted) হয়ে যেতে পারে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার কারণ-
১. পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
২. জেনেটিক্যাল কারণ
৩. রেডিয়েশনে exposed হলে
৪. স্থূলতা
৫. অতিরিক্ত অ্যালকোহল
৬. বয়স বাড়ার সাথে সাথে
৭. মেনোপজের পর হরমোনাল থেরাপি দিলে
৮. টোবাকো নিলে
৯. অপ্রাকৃতিক স্ত্রী হরমোন নিলে
Breast Cancer যাদের বেশি হয় অথবা যেসব risk factor থাকে। স্বাস্থ্য পরামর্শ by Health science |
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ( Symptoms of Breast Cancer)
ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায় তা যদি প্রথমে শনাক্ত করা হয় তাহলে ক্যান্সার এর চিকিৎসা দিয়ে তা অনেকাংশে নির্মূল করা সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হীনম্মন্যতা বা সামাজিক স্টিগমা থাকার কারণে অনেকেই তা লুকিয়ে রাখে।
অন্যরা কি ভাববে, স্বামী ভাববে আমার স্ত্রী আর বাচবে না, তিনি অন্য partner খুজবে এরকম ভেবে এবং লজ্জাজনিত কারণে অনেক নারীই ব্রেস্ট ক্যান্সারে লক্ষণ লুকিয়ে রাখে বা বুঝেও বলে না।
ফলস্বরূপ নিজের সজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নিজের মৃত্যুর দিকে সে নিজেই নিয়ে যায়।
তাই স্টিগমা বা ট্যাবুকে তোয়াক্কা না করে নিজের জীবন বাচাতে হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। নিম্নে সাধারণ কয়েকটি লক্ষণ-
১. স্তনে দলা বা lump সৃষ্টি হবে
২. নিপল পেছনের দিকে ঢুকে যাবে এবং শক্ত হবে
৩. অনেক সময় শুধু নিপল শক্ত হবে
৪. আবার অনেক ক্ষেত্রে নিপলের সাথে সাথে স্কিন বা ব্রেস্ট টিস্যু সম্পূর্ণ শক্ত হয়ে যায়। এটা হয় কারণ ব্রেস্টের পেছনে ফাকা জায়গা রয়েছে যাতে রয়েছে অ্যারিওলার টিস্যু। এই ফাকা জায়গার কারণেই ব্রেস্ট দুলতে পারে বা movement হয়।
ক্যান্সার হলে ঐ জায়গাটায় ক্যান্সার cell চলে গিয়ে সম্পূর্ণ ব্রেস্ট এর movement বন্ধ হয়ে যায়।
এজন্যই তা শক্ত হয়ে যায়।
৫. নিপল দিয়ে ফ্লুইড জাতীয় কিংবা হলুদ রঙের তরল পদার্থ নি:সৃত হওয়া।
৬. ক্যান্সার লিম্ফ দিয়ে ছড়িয়ে বগলের লিম্ফ নোডে চলে যেতে পারে, তখন বগলে শক্ত বা কিছু একটার উপস্থিতি দেখা যাবে যা নোডটাকে ফুলাবে।
৭. বগলের উভয় পাশেই তা হবে। ধরুন, ডান ব্রেস্ট বা স্তনে ক্যান্সার হয়েছে, তা সত্ত্বেও বাম বগলের নোডটা( Axillary Lymph node) ফুলে যেতে পারে।
কারণ ক্যান্সার বাম ডান থেকে বাম এবং বাম থেকে ডান দিকে ছড়াতে পারে। ( Lymphatic Connection আছে বলে)।
৮. নিপলে ব্যাথা হওয়া, আকার ও আকৃতির পরিবর্তন।
৯. Rash হওয়া ও লাল হওয়া।
১০. স্তনের সাইজের পরিবর্তন।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ (Symptoms of breast cancer Health tips by health science |
ইত্যাদি লক্ষণ দেখলে বুঝা যাবে Breast Cancer হতে পারে। তাই দ্রুত টেস্ট করানো জরুরি। লক্ষণ বুঝে ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়াই মূল করণীয় বিষয়।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের টেস্ট(Test of Brest Cancer)
ক্যান্সার হলে সাধারণত ম্যামোগ্রাফি(mammorgraphy) করা হয় যার সাহায্যে ব্রেস্টে কোনো অস্বাভাবিক কিছু শনাক্ত করা যায়।
ম্যামোগ্রাফি বলতে ব্রেস্টের x-ray করা বুঝায়। পূর্বে 2D থাকলেও এখন উন্নত 3D প্রযুক্তিও রয়েছে।
ম্যামোগ্রামের সাহায্যে ব্রেস্ট্রের X-ray করা হয় মূলত যার সাহায্যে ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করা সম্ভব হয়। Breast cancer science |
আবার আলট্রাসাউন্ড পাঠিয়ে ব্রেস্টের ছবি নেয়া হয়।
ব্রেস্ট(Breast) থেকে স্যাম্পল নিয়ে তা পরীক্ষা করে ক্যান্সার কোষ আছে কিনা তা দেখা হয়। একে biopsy বলা হয়।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের স্টেজ (Stages of Breast Cancer)
ক্যান্সার কতটা ছড়িয়ে গিয়েছে বা রোগীর অবস্থা কতটা খারাপ বা ভালো তা বুঝার জন্য চিকিৎসকরা বা clinician রা Breast Cancer কে পাচটি স্টেজে ভাগ করে।
কোন স্টেজে আছে তা বোঝার মাধ্যমে ক্যান্সারের ভয়াবহতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
১. স্টেজ-০, এক্ষেত্রে অবস্থা non-Cancerous, খুবই ছোট সাইজের দলা বা lump গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিতেই সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে ভয়ের কিছু এখনো হয়নি।
২. স্টেজ-১, এটাও No cancer, তবে Lump এর সাইজ 2cm, এটা ব্রেস্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
৩. স্টেজ-২, এক্ষেত্রে অবস্থাকে Cancerous বলা হয়, এবং দলার সাইজ 2-5cm। ক্যান্সার ব্রেস্টেই রয়েছে। আশেপাশের লিম্ফ নোডে ছড়াতে পারে।
৪. স্টেজ-৩ এর ক্ষেত্রে ক্যান্সার আশেপাশের মাংসপেশি বা muscle, কিছু রক্তনালিকা, লিম্ফ ও লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে যায়। সাইজ 5cm অপেক্ষা বড় হয়।
৫. স্টেজ-৪, ব্রেস্ট ক্যান্সারের সর্বশেষ স্টেজে ক্যান্সার শরীরের যেকোনো অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। তখন রোগীকে বাচানো সাধারণত সম্ভব হয় না। সাইজ যেকোনো রকম হতে পারে।
Breast cancer এর কয়েকটি স্টেজ। Health science |
ব্রেস্ট ক্যান্সারের ভয়াবহতা (Complications of breast cancer)
ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে ক্যান্সার কোষগুলো শরীরের নানা অংশে ছড়িয়ে গিয়ে বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি করে। তখন মৃত্যু অবধারিত হয়ে যায়।
১. ক্যান্সার কোষগুলো ব্রেস্টের নিপলের পিছনে লিম্ফে চলে এসে Obstruction বা পথ বন্ধ করে দেয়, তখন নিপলের চুল(hair) ও সম্পূর্ণ ব্রেস্ট শক্ত হয়ে একটা কমলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয় যা হচ্ছে Peau D'Orange.
২. ক্যান্সার শিরার মাধ্যমে মেরুদণ্ড এবং সেখান থেকে ব্রেনে চলে যেতে পারে।
৩. ক্ষেত্রবিশেষ লিম্ফ এর মাধ্যমে ওভারি বা ডিম্বাশয়(Ovary) তে চলে যেতে পারে, তখন একে বলে Krukenberg disease or tumour.
0 Comments