ক্যান্সার এমন এক ব্যাধি যা শুধু একটি ব্যক্তিতে নয় বরং একটি সম্পূর্ণ  পরিবারকে ধ্বংস করে ফেলে। ক্যান্সার শারীরিকভাবে যতটা না ক্ষতিকর, মানসিকভাবে তার চেয়ে বহুগুণে ব্যক্তিকে বিপদগ্রস্ত করে। এ মরণব্যাধিরই এক নামান্তর। 

 স্বাভাবিকভাবে ব্যক্তির দৈনন্দিন লাইফস্টাইলই তার সুস্থতা নির্ধারণ করে। বর্তমান যুগে লাইফস্টাইলের ব্যাপক পরিবর্তন আসায় সামনের দিনগুলোতে ক্যান্সার বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। তাই এখন থেকেই এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচেতনতা জরুরি। 

একটি স্টাডিতে পাওয়া গেছে প্রতি ৪জন বা প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজনের ক্যান্সার হয়। অর্থাৎ ক্যান্সারের ভয়াবহতা এতোই বেড়ে গেছে যে গড়ে আপনার পরিবারের একজন ক্যান্সারে(Cancer) আক্রান্ত হবে। তাই এ ব্যাপারে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে, তেমনি প্রয়োজন স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান ও সচেতনতা। 


Cancer keno barbe, Cance r hoi keno,ক্যান্সার থেকে বাচার উপায় ও প্রতিরোধের উপায়, symptoms of cancer এবং তা হলে কি কি সমস্যা হয়, মানুষ মারা যায় কেনো
ক্যান্সার আগামী দিনগুলোতে বৃদ্ধি পাবে। 
Health science 
স্বাস্থ্য সচেতনতা জরুরি


ক্যান্সার কেন হয়, এটি হওয়ার কারণ? কি কি সমস্যা হয়?

ক্যান্সার হওয়ার রয়েছে বহু কারণ যার মধ্যে প্রধানত বলা যেতে পারে লাইফস্টাইল। একটি অসুস্থ লাইফস্টাইল ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

যদিও ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো যানা যায়নি, এর জন্য আলাদা আলাদা ভাবে অনেকগুলো কারণ বলা যেতে পারে। 

লাইফস্টাইল

স্বাস্থ্যকর খাবার, শাক-সবজি জাতীয় খাবার না খাওয়া এবং অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার গ্রহণ। তখন মূলত পায়ুপথে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা কোলন ক্যান্সার এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 
এছাড়াও পরোক্ষভাবে অন্যান্য ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

ধূমপান ও অ্যালকোহল

ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সার বাড়ায় এবং অ্যালকোহলও স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যের  জন্য ক্ষতিকর। 
ইদানীং সিগারেট খাওয়াটা খুবই সাধারণ একটা বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে যে কেউই সিগারেট খাচ্ছে এবং এটাকে স্বাভাবিক হিসেবেই নিচ্ছে। 
অনেকে আবার নিজেকে এ কারণে smart ও ভাবছে। 

সর্বোপরি তা শুধুমাত্রই ফুসফুস, শ্বাসনালি, মুখে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

যেহেতু বিরাট এক যুবসমাজ এখন ধূমপানকে বরণ করে নিচ্ছে তাই আগামী দিনগুলোতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়বে। নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এখনই সচেতন হওয়া দরকার। 

দূষণ

ঢাকা শহরে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকারে বেড়েছে এবং বাড়বে। 
বায়ুদূষণ তার মধ্যে অন্যতম। 

এ নিয়ে বিস্তর ব্যাখ্যার তেমন প্রয়োজন নেই। বায়ুতে ক্ষতিকর পার্টিকেল স্বাভাবিক জৈবিক কার্যাবলির বিঘ্ন ঘটাবে। 

গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি 

গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্ট্রিতে ব্যবহৃত নানা কেমিক্যাল এবং ডাই( অ্যাজো-ডাই) এর ব্যবহার রয়েছে। 
এসব কেমিক্যালে exposure হলে অথবা যেসব ডাই ব্যবহৃত হয় তা ধ্বংস বা নিষ্ক্রীয় (degeneration process) করতে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে না।

তাই ক্যান্সার বাড়ছে। 

চামড়া শিল্প 

চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত ক্যামিকেল নি:সন্দেহে ক্ষতিকর। তবে এখানে কর্মরত কর্মীদের যে সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার তা মোটেও করা হয় না। 
ফলে দীর্ঘদিন কাজ করার পর কর্মীরা অসুস্থ হয়। Cancer এর সম্ভাবনা বাড়ে। 

Cancer keno barbe, Cance r hoi keno,ক্যান্সার থেকে বাচার উপায় ও প্রতিরোধের উপায়, symptoms of cancer এবং তা হলে কি কি সমস্যা হয়, মানুষ মারা যায় কেনো
Cancer হওয়ার যত কারণ, মূলত সুস্থ সবল lifestyle মেনে চললে ক্যান্সার হবে না। তবুও জেনেটিক্যাল কারণে হতে পারে। মানুষের কার্যকলাপের পরিবর্তন ব্যাপক হয়েছে বলে ক্যান্সার বাড়বে। 
স্বাস্থ্য সচেতনতা By health science  


furniture industry 

ফার্নিচার শিল্পের সমৃদ্ধি গত ১০ বছরে ব্যাপক আকারে বেড়েছে। 
স্বাভাবিকভাবেই ফার্নিচার শিল্পে ব্যবহৃত কর্মীরা ক্যান্সারের ঝুকিতে রয়েছে। 

হাটাচলার জন্য জায়গার অভাব 

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকায় হাটার মতো কোনো অনুকূল জায়গা তেমন নেই। ফলস্বরূপ স্থূলতা বা obesity অনেক বেড়ে যাচ্ছে। 

মানুষের স্বাভাবিক রুটিন ঠিক থাকছে না। ফলে Hormonal imbalance বা হরমোনের সঠিক পরিমাণে সামঞ্জস্য থাকছে না। 
যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

জন্মনিরোধক পিলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে কেউই ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া জন্মনিরোধক পিল দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ কাউন্টারে এসব সহজলভ্য। 
তাই বিন্দুমাত্র সচেতনতা ছাড়াই অনেকেই পিল দীর্ঘসময় ধরে নিয়ে থাকে।

এর ফলে মেয়েদের জরায়ু ক্যান্সার, সার্ভিক্স ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

Hormonal replacement therapy 


বর্তমানে culture এর পরিবর্তন হচ্ছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি আমরা লালন-পালন করছি। তাই অনেকেই নিজেকে আকর্ষণীয় রাখতে বর্তমানে hormonal therapy গুলো নিচ্ছে। 
মূলত ৪০-৪৫ বছরের পর মেনোপজ হলে ইস্ট্রোজেন কমে যায় বলে গায়ের চামড়া ও দেহ কম আকর্ষণীয় হয়। 
কিন্তু নিজেকে আকর্ষণীয় রাখতে মেয়েরা এখন নানা হরমোনাল থেরাপি তথা ইস্ট্রোজেন নিয়ে থাকে। 
দীর্ঘদিন যাবৎ এসব থেরাপি নিলে নারীদের জরায়ুর সর্ব অন্তস্থ পর্দায় ক্যান্সার হতে পারে (endometrial hypertrophy)। 

যেহেতু সারাবিশ্বেই এসব থেরাপির ব্যাপক প্রচলন হচ্ছে, বাংলাদেশও যার ব্যতিক্রম নহে। তাই ক্যান্সার যে বাড়বে তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। স্বাস্থ্যঝুকি তো বাড়ছেই। 

Skin products


স্কিনকে মসৃণ ও সুন্দর রাখতে বিভিন্ন প্রসাধনীর ব্যবহারের কমতি নেই। বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে সিরাম যা মূলত ইস্ট্রোজেন। এটা ব্যবহারে স্কিন অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়। 

তাই একবার ব্যবহার করার পর পুনরায় ব্যবহার না করলে স্কিন আকর্ষণীয় দেখায় না বলে ভালো লাগে না। তাই পুনরায় ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়। এভাবে দীর্ঘসময় ব্যবহার করলে স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

যৌনতার ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ 

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের নোংরা যৌনমূলক কার্যক্রম আমরা অনুসরণ করছি। 
একাধিক যৌন সঙ্গী রাখা, পশ্চাৎ বা anal sex করা ইত্যাদি reproductive organ বা যৌনাঙ্গে ক্যান্সার বৃদ্ধি করছে। 

এসব কারণে ক্যান্সার হচ্ছে এবং দিন দিন মৃত্যুহার বাড়ছে।

আগামী দিনগুলোতে ক্যান্সার ও স্বাস্থ্যঝুকি বাড়বে। তাহলে করণীয় কি? 

১.স্বাস্থ্য সচেতন ও ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হওয়া


ক্যান্সার যদি হয়ে যায় এবং তা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে ক্যান্সার চিকিৎসা(Cancer treatment) করা সম্ভব। তাই ক্যান্সারের লক্ষণ(Symptoms of cancer) দেখলে ও অস্বাভাবিক কিছু দেখলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। অনেকেই বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে
যেমন-
পায়ুপথে রক্ত গেলে পাইলস বা ফিশার বলে চালিয়ে দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনি হয়, তবে যথাযথ ভাবে রোগ শনাক্ত করা জরুরি। কেননা এই লক্ষণ কোলন ক্যান্সারও হতে পারে। তাই লজ্জা না পেয়ে সঠিক রোগ শনাক্তকরণ বা diagnosis হতে হবে। 

আবার স্তন বা breast Cancer এর ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে স্তন শক্ত হয়ে যায়, বা নিপল ভিতরে ঢুকে যায়, বগলে শক্ত কিছু দলার মতো পাওয়া যায় ইত্যাদি। 
এরকম হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন সাতে সাথে হয়ে টেস্ট করা জরুরি। এক্ষেত্রে ম্যামোগ্রাফি করা হয়। 
পূর্ব 2 Dimensional mammography ছিলো, এখন 3D বা 3 Dimentional mammography করা হয় যা আরো উন্নত। 

মেয়েদের cervis cancer থাকলে pap test এর মাধ্যমে গাইনির কাছ থেকে cancer সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যায়, যার খরচও বেশি নয়। 

থাইরয়েড ক্যান্সার শনাক্ত করলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা এবং ৫০ বছরের উর্ধ্বে পুরুষদের প্রস্টেট বড় হয়ে যায় যা ক্যান্সারের সাথে মিলসমপন্ন। তাই এগুলো উপেক্ষা না করা। 

কেননা ক্যান্সার যদি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায় তাহলে নির্মূল সম্ভব। তবে দুর্ভাগ্যবসত বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা এমন অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসে যখন ক্যান্সারের শেষ পর্যায় থাকে। তখন আর কিছু করার থাকে না। 

২. সুস্থ লাইফস্টাইল ও পরিমিত খাবার গ্রহণ 
৩. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিত্যাগ 
৪. যেকোনো ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া 
৫. দূষণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার সর্বোচ্চ প্রয়াস 
৬. ইতোমধ্যে বলা বিভিন্ন দূষণ ও হরমোনাল থেরাপি দীর্ঘদিন যাবৎ না নেওয়া। 


Cancer keno barbe, Cance r hoi keno,ক্যান্সার থেকে বাচার উপায় ও প্রতিরোধের উপায়, symptoms of cancer এবং তা হলে কি কি সমস্যা হয়, মানুষ মারা যায় কেনো
Cancer হলে একটি পরিবার ধসে যায় কেননা আর্থিকভাবে ক্যান্সার ব্যয়বহুল। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে অর্থ সঞ্চয় করা জরুরি। 
তাছাড়াও উপরোক্ত স্বাস্থ্য-বিধি মানতে হবে। 
Health tips bangla 


৭।অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হওয়া এবং টাকা জমানো বা save করা 

প্রতি ৪-৬ জনে একজনের ক্যান্সার হয়, পরিসংখ্যান এতটাই ভয়াবহ যে আপনার পরিবারের একজনের ক্যান্সার হতেই পারে। ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেকটাই ব্যয়বহুল। তাই ক্যান্সার হতে পারে এমন চিন্তা-ভাবনা করেই টাকা save করা উচিত। 
অনেক সময় দেখা যায় ক্যান্সার একটি পরিবারকে পথে নামিয়ে দেয়। তখন মানসিক বিপদগ্রস্ততায় ক্যান্সারে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে যায়। 
 

৮। vaccine নেয়া

সার্ভিক্স ক্যান্সার দূরীকরণে এবং অন্যান্য কিছু ক্যান্সার রোধে ভ্যাক্সিন নেয়া হয়। তবে ভ্যাক্সিন নিলাম মানে ক্যান্সার রোধ হয়ে গেলো এমন ভেবে অস্বাস্থ্যকর কার্যক্রম করবো, এমনটা নয়। 
বরং vaccine নেয়ার পরও সর্বদা স্বাস্থ্য সচেতন থাকা জরুরি।