গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার হওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ এবং সমাধান-(পেটে জ্বালাপোড়া!)

 আলসার বলতে বুঝানো হয় ক্ষত হওয়া। শরীরের যেকোনো অংশে ক্ষত বা আবরণী অংশে ঘা হওয়া, ঐ অংশটা ছিড়ে যাওয়া বা সেখানে ছিদ্র হওয়া ইত্যাদি বুঝায়। 

গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার বলতে পাকস্থিতে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কারণে পাকস্থলির আবরণী অংশে ক্ষত বা ঘা হওয়া অথবা ঐ অংশের breakdown হওয়া বুঝায়। 

অনেক সময় পাকস্থলীর ঐ আবরণীর মিউকাস মেমব্রেনে ছিদ্রের সৃষ্টি হয় যাকে বলা হয় perforation.

এভাবে ক্ষত বিক্ষত হওয়ার সাথে সাথে পেটে ব্যাথা ও জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হয় যাকে বলা হয় পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার। তবে এই আলসার হওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ কি? 


দেহের স্বাভাবিক এসিড নি:সরণ ও কার্যাবলি

স্বাভাবিক ভাবে খাবার খাওয়ার চিন্তা করলে বা খাবার মুখে পুরে নিলে পাকস্থলির প্যারাইটাল কোষ থেকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নি:সৃত হয়। 

এই HCl এর কাজ হচ্ছে ক্ষতিকারী ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য রোগজীবাণু ধ্বংস করা। এছাড়াও এই এসিড নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেনকে সক্রিয় করে পেপসিনে পরিণত করে যা পরিপাকে সাহায্য করে। 

অর্থাৎ পরিপাক ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য দরকার HCl. এই এসিডের pH ২-৩ যা অত্যান্ত এসিডিক। এটা পাকস্থলিতে ক্ষত সৃষ্টি করবে। 

তাই ক্ষত যাতে না হয় তার জন্য পাকস্থলিতে রয়েছে-

১. গ্যাস্ট্রিক মিউকাস বা মিউকাস জেল যা একটা প্রতিবন্ধক বা barrier হিসেবে কাজ করে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিরুদ্ধে। ফলে পাকস্থলিতে ক্ষত হয় না।

২. বাইকার্বনেট আয়ন হাইড্রোক্লোরিক এসিডকে কিছুটা প্রশমিত করে। 


দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাই এসিডিক হাইড্রোক্লোরিক এসিড নি:সরণ হওয়া সত্ত্বেও পাকস্থলীতে কোনো ক্ষত হয় না। তবে এই স্বাভাবিক অবস্থার বিচ্যুতিই এসিডিটি সৃষ্টি করে আলসার ঘটায়। 


পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয়? (What is reason behind peptic ulcer?)

১. যখন হাইড্রোক্লোরিক এসিড নি:সরণ এবং যেসব ফ্যাক্টর পাকস্থলীতে রক্ষা করে এসিড থেকে সেসব ফ্যাক্টরের ভারসাম্য নষ্ট হয় তখন পেপটিক আলসার হয়। অর্থাৎ কোনো কারণে যদি অতিরিক্ত HCl নি:সরণ হয় অথবা কোনো কারণে ঐ সব ফ্যাক্টরগুলো( বাইকার্বনেট, মিউকোসা) যথাযথ না কাজ করে তাহলে আলসার(Ulcer) হবে। 


২. এর অন্যতম কারণ হচ্ছে Helicobactor pylori নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রমিত হলে। এই ব্যাকটেরিয়া দেহের হাইড্রোক্লোরিক এডিসেও ধ্বংস হয় না। তাই একে ধ্বংসের জন্য দেহ প্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিরিক্ত  HCl ক্ষরণ করে। 

ফলে হয় Ulcer ও perforation

৩. অ্যালকোহল বেশি গ্রহণ করা আরেকটি কারণ।  এসব  তরল বা liquid জাতীয় খাবার দ্রুত ও সরাসরি পাকস্থলির(stomach) ছোট বাক(lesser curvature) এর মধ্য দিয়ে গিয়ে ডিওডেনামে চলে যায়। 

ফলে ঐ অংশে ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয়, peptic ulcer হলে কি করণীয় ও সমাধান, gastric আলসার এর ঔষধ, পেট জ্বালাপোড়া কেন করে
gastric ulcer হওয়ার কিছু কারণ
Health tips
Health science 


৪. কোনো ব্যক্তির পাকস্থিলর আকৃতি বা Shape কি রকম সেটার ওপর নির্ভর করে অনেকে আলসারের ঝুকিতে পরে। স্বাভাবিক পাকস্থলীর আকৃতি ইংরেজি J সেইপের মতো। 

তবে যারা বেশি চিকন বা শারীরিকভাবে ফিট নয়(asthenic) তাদের ক্ষেত্রে পাকস্থলীর আকৃতি হয় বেশি লম্বালম্বি বা verticle। ফলে খাদ্যবস্তু দ্রুত ক্ষত তৈরি করে চলে যেতে পারে। 

৫. একটি বিরল রোগ হতে পারে যাকে বলে Zollinger-Ellison syndrome, তখন পাকস্থলী বা stomach থেকে অতিরিক্ত এসিড ক্ষরণ হয়ে আলসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

৬. যেসব agent বা বিষয়াদি খেলে HCl ক্ষরণের মাত্রা বেড়ে যায় সেসব খেলে। 

৭. অ্যাসপিরিন, Non steroidal anti inflammatory drug আলসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। মূলত নিয়মিত এসব ব্যবহার করলে ulcer হতে পারে। 

৮. সিগারেট নিলে 

৯. রেডিয়েশনের কারণে 

১০. অতিরিক্ত স্ট্রেস(stress) নিলে। 

ইত্যাদি কারণে peptic অথবা gastric ulcer হতে পারে।


Gastric ulcer হলে করণীয়?

আলসার হলে spicy জাতীয় খাবার পরিহার জরুরি। তার সাথে ধূমপান পরিহার এবং অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রুফেন খাওয়া যাবে না। 

সর্বোপরি ডাক্তার দেখিয়ে তার পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া। 

তবে প্রাথমিকভাবে আলসার হলে কিছু ঔষধ নেয়া যেতে পারে। 

পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঔষধ বা মেডিসিন হচ্ছে ওমেপ্রাজল( omeprazole,) জাতীয় ওষুধ। যেকোনো ক্লিনিকেই তা পাওয়া যাবে। 

এছাড়াও এন্টাসিড নিতে পারেন। 

যদি আলসার অতি মারাত্মক হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক (amoxicillian) নিবেন। 

গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয়, peptic ulcer হলে কি করণীয় ও সমাধান, gastric আলসার এর ঔষধ, পেট জ্বালাপোড়া কেন করে
গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে যেসব করা জরুরি। 
গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঔষধ
Health tips



Post a Comment

0 Comments