ডায়রিয়া কেন হয়? বৈজ্ঞানিক কারণ, লক্ষণ ও করণীয়( Diarrhoea)

 ডায়রিয়া বা উদরাময় বলতে দৈনিক তিন বা তার অধিক বার পাতলা পায়খানা বা loose motion হওয়া বুঝায়, এবং এর পরিমাণ হবে ২০০ গ্রাম অপেক্ষা বেশি। 

পাতলা পায়খানা হওয়াই ডায়রিয়া নয়। ডায়রিয়া হতে হলে পানির মতো মল(watery stool) নিম্নে দৈনিক ৩ বার নি:সৃত হতে হবে। এটাই WHO এর সংজ্ঞা। 

ডায়রিয়া নির্দিষ্ট কোনো রোগ নয় বরং একটি symptom বা উপসর্গ। অর্থাৎ অন্য কোনো একটি রোগের উপসর্গ হিসেবে ডায়রিয়া হয়। 

ডায়রিয়া বাংলাদেশে অত্যন্ত common একটি অবস্থা যা অনেকেরই হয়ে থাকে। 

তবে ডায়রিয়া কেন হয়, এবং হলে শরীরে কি হয় এবং করণীয় বিষয়াবলি কি?

ডায়রিয়া কেন হয়? (Why diarrhoea occurs?)

খাদ্য খাওয়ার পর তা আমাদের পরিপাকনালি অর্থাৎ মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত যে পথ আছে তা দিয়ে খাদ্য যায়। এই পরিপাকনালির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় খাদ্য পরিপাক ও শোষণ হয় এবং মল হিসেবে দেহের বাইরে নিষ্ক্রান্ত হয়।

খাদ্য পরিবাহিত হয় পেরিস্ট্যালসিস প্রক্রিয়ায়। পেরিস্ট্যালসিস বলতে খাদ্যদলা বা bolus এর পেছনের অংশ সংকুচিত এবং সামনের অংশ প্রসারিত হয় একইসাথে(simultaneously)। ফলে খাদ্য সামনের দিকে ধাবিত হয়।

এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে কোনো কারণে এই পেরিস্ট্যালসিস মাত্রাতিরিক্ত হলে অতি দ্রুত গতিত খাদ্য পরিবাহিত বা pass করে। অর্থাৎ অতিরিক্ত মল বের হয়। তখন তা তরলাকার হয়ে যায় এবং একপর্যায়ে অতিরিক্ত তরলরূপ মল নির্গমন হলে তা ডায়রিয়া হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হওয়া ডায়রিয়ার লক্ষণ(Symptoms of diarrhoea)

এখন অতিরিক্ত পেরিস্ট্যালসিস কেন হবে। পরিপাকনালিতে যদি কোনো ইনফেকশন হয় তাহলে প্রদাহজনিত কারণে অতিরিক্ত প্যারিস্ট্যালসিস হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি খাদ্যের সাথে পেটের ভেতরে প্রবেশ করে এরূপ ঘটায়। 

তাই কথায় কথায় বলা হয়, কি উল্টোপাল্টা খেয়েছিস যে ডায়রিয়া হলো। অৎবা, বাইরের দূষণজনিত ধূলাবালিমিশ্রিত খাবার (ফুসকা, ঝালমুড়ি) খাওয়ার পর ডায়রিয়া দেখা দেয়। অথবা বাইরের পানি খেয়েও এমনটা হয়। 

পচা-বাশি খাবারে রোগজীবাণু ছড়িয়ে থাকে। তাই দূষিত খাদ্য খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডায়রিয়ার কিছু কারণ-(some causes of diarrhoea)

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রোটা ভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া হয়। এছাড়াও HIV, সাইটোমেগালো, হেপাটাইটিস A ইত্যাদির কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। 

Entamoeba histolytica ব্যাকটেরিয়া সবচেয়ে common যার কারণে diarrhoea হতে পারে। এছাড়াও সিগেলা, স্যালমোলেনা, জিজিনি ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়ার কারণে ইনফেকশন হয়ে ডায়রিয়া হয়। 

ডায়রিয়া হওয়ার কারণ কি, ডায়রিয়ার লক্ষণ,diarrhoea হলে করণীয়, চিকিৎসা, ওষুধ ,সমাধান, diarrhoea এর ক্ষতিকর প্রভাব
ডায়রিয়া হওয়ার কারণ, ডায়রিয়া কেন হয়
causes of diarrhoea
Health science 


আবার, ভ্রমণ করার সময় travelers diarrhoea নামক একটি ডায়রিয়া হয়। বিভিন্ন ঔষধ বা ড্রাগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ ডায়রিয়া হয়। 

ডায়াবেটিস থাকলে, অগ্ন্যাশয় বা pancreas এ রোগ থাকলে, celiac disease ইত্যাদি থাকলে ডায়রিয়া হতে পারে। 


ডায়রিয়ার লক্ষণ(Symptoms of diarrhoea)

  • পেটে ব্যাথা
  • বমি বমি ভাব
  • জ্বর আসা
  • পাতলা পায়খানা
  • শরীরে পানি কমে যায়, তাই ব্লাড প্রেসার কমে, ফলে শরীর দুর্বলাভাব
  • ক্ষেত্রবিশেষ পায়খানার সাথে রক্ত যাবে
ডায়রিয়া হওয়ার কারণ কি, ডায়রিয়ার লক্ষণ,diarrhoea হলে করণীয়, চিকিৎসা, ওষুধ ,সমাধান, diarrhoea এর ক্ষতিকর প্রভাব
ডায়রিয়ার লক্ষণ
symptoms of diarrhoea 
স্বাস্থ্য পরামর্শ 


ডায়রিয়া হলে শরীরের ক্ষতি ও ভয়াবহ পরিণতি

অতিরিক্ত তরলরূপ মল নির্গমনই ডায়রিয়া। তখন দেহের কয়েকটি পরিবর্তন সাধিত হতে পারে-

১. দেহের ইলেকট্রোলাইট কমে যাওয়া।( সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড, বাইকার্বনেট এর ওপর অধিক প্রভাব পড়ে। 

২. দেহের এসিড-বেস এর ভারসাম্য বিনষ্ট।

৩. dehydration (ডিহাইড্রেশন) বা শরীরে অতিরিক্ত পানির অপচয় হয়। 

. পানি কমে গেলে ব্লাড প্রেসার কমে যায়। তখন রোগী এমনকি shock এও চলে যেতে পারে যদি ডায়রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করে। 

৫. স্বাভাবিকভাবেই শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যায়। 

৬. hypoglycemia হতে পারে 

৭. মূত্র কম তৈরি হবে। 

৮. কিডনির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। 

৯. ডায়রিয়ার কারণে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে টিটানিও হতে পারে।


ডায়রিয়ার চিকিৎসা কি? ডায়রিয়া হলে করণীয়( What is the treatment for diarrhoea) 

অবশ্যই ORS( Oral Rehydration Saline) দিতে হবে। যেহেতু পানি অপচয় হচ্ছে তাই পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ORS হচ্ছে ডায়রিয়ার ঔষধ।

তাই ORS যেভাবে প্যাকেটে তৈরি করতে বলা হয়েছে ঠিক সে পরিমাণ পানি ও স্যালাইন মিশিয়ে খেতে হবে। অতিরিক্ত পানি বা কম পানি নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। 

এছাড়াও একজন ব্যক্তির দৈনিক ১-১.৫ লিটার পানি প্রয়োজন, তা তো দিতেই হবে। 

যদি ডায়রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং স্যালাইন দেয়ার পর বমি হয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে শিরার মাধ্যমে স্যালাইন দিতে হবে(intravenous infusion)  

আবার শুধু পানি খেলে ডায়রিয়ার পানির ঘাটতি পূরণ হবে না। বরং ঐ পানিও মলের সাথে বের হয়ে যাবে। অবশ্যই স্যালাইন খেতে হবে। 

ডায়রিয়া হলে বাইরের বাসি খাবার পরিহার করবে। ফল এবং ফ্লুইড নিতে হবে বেশি। 

ডায়রিয়া হলে যেভাবে investigation করা হয়?

যদি ডায়রিয়া হয় এবং তা স্যালাইন খেলেই ঠিক হয়ে যায় তাহলে তো সমস্যা সমাধান। 

যদি সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে মল পরীক্ষা করতে হবে। মলে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, ভাইরাস আছে তা পরীক্ষা করে প্রকৃতপক্ষে কি সমস্যা আছে তা বের করা হয়। প্রকৃত রোগ খুজে বের করে ঐ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।

আবার ডায়রিয়ার সাথে যদি জ্বর, বমি, মাথাব্যাথা থাকে তাহলেও মল(stool) পরীক্ষা করতে হবে। 

ডায়রিয়ার মাধ্যমে রক্ত বা খাবার বা মিউকাস যেতে পারে, তখন তা আমাশয়(dysentery)।  সে অনুযায়ী তখন চিকিৎসা হবে। 

ডায়রিয়ার সাথে ফ্যাটও যেতে পারে। 


Post a Comment

0 Comments