বাংলাদেশে দিন দিন টাইফয়েড, জন্ডিস ইত্যাদি বাড়ার কারণ কি? (২০২৪)

 টাইফয়েড হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি জ্বর বা ইনফেকশন যখন স্যালমোনেলা টিপহি(salmonella typhi) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়। এই ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করে সংখ্যা বৃদ্ধি করে মানুষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাকি দিয়ে কাজ করতে পারে। 

অপরদিকে জন্ডিস হচ্ছে দেহে বিলিরুবিনের পরিমাণ 3mg/dl অপেক্ষা বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে চোখ,মিউকাস, মেমব্রেন ইত্যাদি হলুদ হয়ে যাওয়ার উপস্থিতি। এখন এটা RBC বা লোহিত রক্তকণিকা ভাঙার কারণে হতে পারে। ভাইরাস হেপাটাইটিস বা ভাইরাসের কারণে ইনফেকশন হয়ে হতে পারে। আবার পিত্ত বা পিত্তপথের যেকোনো অংশে পাথর হওয়ার কারণেও হতে পারে। 

তবে জন্ডিস বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা হেপাটিক জন্ডিসই বুঝে থাকে। 

এখন টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি রোগবালাই দিন দিন বেড়েই চলছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে খাদ্যে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি। দিন দিন যতই সময় যাচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং খাবারের মধ্যে দিয়ে আমরা বেড়ে ওঠছি। 

বাংলাদেশের মার্কেটে মুরগীতে ভেজাল, ব্যাকটেরিয়া এবং হেভি মেটাল পাওয়ার কারণে দিন দিন ডায়রিয়া,টাইফয়েড,জন্ডিস বেড়েই চলেছে
বাংলাদেশে মুরগী সহ বিভিন্ন খাদ্যে দূষণের মাত্রা পেয়েছে বৃদ্ধি
Health science 


বাংলাদেশের মুরগীর বড় বাজারে দূষণের উপস্থিতি? 

সাইনটেফিক রিপোর্ট নামে এক আন্তর্জাতিক জার্নালে বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা সম্পাদিত একটি গবেষণায় বাংলাদেশের বড় কয়েকটি বাজার যেখান থেকে সারা ঢাকায় মুরগী দেয়া হয় ( কারওয়ান বাজার, গুলিস্থান কাপ্তাই বাজার, মিরপুর কাচা বাজার, মহাখালী কাচা বাজার) ইত্যাদি বাজারগুলো থেকে মুরগীর খাবারের, মুরগীর মধ্যে থাকা পদার্থের স্যাম্পল এবং ওখানে যে ড্রেইনেস ব্যবস্থা আছে সেই অংশের স্যাম্পল নিয়ে থাকে। 

তারপর সেটা নিয়ে পরীক্ষা করে তারা ওসব স্যাম্পলে বিভিন্নরকমের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি খুজে পায়। এর মধ্যে রয়েছে স্যালমোনেলা, ই কোলাই এবং স্ট্রেপটোকক্কাস অরিয়াস( salmonella, Escherichia coli, streptococcus aurius) ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া।

এসব ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে প্যাথোজেনিক( pathogenic) অর্থাৎ এরা দেহে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও এসব ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে অ্যান্টি বায়োটিক রেজিস্ট্যাস, অর্থাৎ অ্যান্টি বায়োটিক খেলে আপনার রোগ সারবে না। 

অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজধানীতে যেসব বড় বাজার বা wholesale market থেকে মুরগী সরবরাহ হচ্ছে সারা ঢাকায় সেখানে রয়েছে মারাত্মক সব ব্যাকটেরিয়া যা টাইফয়েড, ডায়রিয়া সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও এসব ব্যাকটেরিয়া এন্ডোটক্সিন তৈরি করতে পারে যা এক ধরনের বিষ। 

আবার মুরগীর ডিমে বিভিন্ন হেভি ম্যাটাল যেমন- কপার, লেড ইত্যাদি ছড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ ফার্মের মুরগী অর্থাৎ খাচায় বন্দি করে যে মুরগীর লালন-পালন করা হয় সেসব মুরগীকে যা খাওয়ানো হয় তাতে রয়েছে ব্যাপক মাত্রায় হেভি ম্যাটালের উপস্থিতি। 

এসব হেভি ম্যাটাল বা ভারী বস্তু ডিমে এসে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে জটিলতা সৃষ্টি করছে। এসব বস্তু কোষের কোনো অংশের সাথে যুক্ত হয়ে কোষকে তার স্বাভাবিক ক্রিয়া বা ফাংশনে ব্যাঘাত ঘটায়। 

এছাড়াও bone formation বা অস্থি গঠনে ব্যাঘাত ঘটায় হেভি ম্যাটাল। 

বর্তমানে দেখা যায় সব ক্ষেত্রেই কৃত্রিমতা এসে পড়েছে। খাবারের ক্ষেত্রেও তা দেখা যায়। পূর্বে দেশি মুরগী এবং এর ডিম ব্যাপক আকারে পাওয়া গেলেও এসবের এখন প্রায় বলতে গেলে দেখাই যায় না। 

এমনকি মাছ এবং ফলেও রয়েছে ব্যাপক ভেজাল। জমিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কীটনাশক তো জমির উর্বরতা নষ্ট করছেই। সাথে পানি দূষণ, বায়ু দূষণ বেড়েছে ব্যাপক আকারে। 


সব কিছুর কারণেই মূলত ইদানীং জন্ডিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া সহ রোগবালাই বেড়েই চলেছে।



Post a Comment

0 Comments