নাকে পলিপ হওয়া বা পলিপাস সংক্রান্ত সমস্যা আমাদের দেশে কমন বা সাধারণ একটা ব্যাপার। অনেকেই পলিপ সংক্রান্ত পলিপাসে ভুগে থাকে। নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষ নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মতো ঘটনাও দেখা যায়।  


নাকের পলিপাস কেন হয়,নাকের পলিপাসের চিকিৎসা,ঔষধ,দূর করার উপায়,নাকের পলিপাসের অপারেশন খরচ,naker polypas er lokhon,কি কি সমস্যা হয়,নাকের মাংস বৃদ্ধি ছবি
নাকের পলিপাস ছবি 
(Photo of nasal polypus)
Health science


যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা, অ্যাজমা বা হাপানি রয়েছে, দূষণযুক্ত এলাকায় বেশি বিচরণ করেন বা দূষণের মধ্যে থাকেন অথবা নাক সংক্রান্ত অত্যান্ত বালাই বিদ্যমান তাদের পলিপাস বেশি হয়ে থাকে। 


নাকের পলিপ বা পলিপাস কি?(What is nose polyp)

নাকে যে অস্থি বা বোন রয়েছে তার lining বা আবরণে যে মাংস থাকে তা ফুলে যাওয়াটাই হচ্ছে পলিপাস। 

সাধারণ ভাষায় পলিপ অর্থ হচ্ছে যেকোনো ধরনের বৃদ্ধি পাওয়া যা ক্যান্সার নয়। এটা যে শুধুমাত্র নাকে হবে তা নয় বরং শরীরের যে কোনো অংশেই হতে পারে। 

কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বৃদ্ধি পায় তবে তা ক্যান্সার পর্যায়ে যায় না, এমন বৃদ্ধিই পলিপ। নাকের ভেতরে আবরণের কাছে বা মিউকাস মেমব্রেন থেকে এরূপ বৃদ্ধি পাওয়াই হচ্ছে পলিপ। 

তবে নাকের যে চারটি সাইনাস রয়েছে( ফ্রন্টাল, ম্যাক্সিলারি, এথময়েড ও স্ফেনয়েড) সেটার ভেতরের আবরণীর মাংস ফুলে গিয়েও নাকের পলিপাস হতে পারে। বরং এটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় যা নাকের ফাকা জায়গা থেকে পররবর্তীতে নাকের ভেতরেও এসে পড়তে পারে। 

পলিপ সাধারণত গ্রুপ গ্রুপ আকারে জন্মায়। এবং বড় হয়ে নাক বন্ধও করে দিতে পারে।

তবে পলিপাস হয় কেন?( Cause of polypus)

ঠিক কি কারণে পলিপাস সংক্রান্ত রোগ হয় তা চিকিৎসদের জানা নেই। এ নিয়ে গবেষণা বিদ্যমান। 


তবে ইনফেকশন (ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া) এর কারণে পলিপাা হওয়ার মিল খুজে পাওয়া যায়। কারণ পলিপ টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করে সেখানে ইউসিনোফিল পাওয়া গেছে যা ইনফেকশনের সাথে মিলসমপন্ন। 

এছাড়াও যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে, ধুলাবালি ও দূষণকারী এলাকায় বেশি থাকেন, হাপানি রয়েছে তারা পলিপাসের ঝুকিতে থাকতে পারেন। 

মূলত inflammation বা প্রদাহই পলিপাস বা পলিপ তৈরি করে। তখন মিউকাস মেমব্রেন ফুলে যায় ও লালও হয়ে যায়। 

আবার যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে তারা জেনেটিক্যালিও পলিপাসের ঝুঁকিতে থাকে। অনেক সময় পলিপাস থাকলে আঘাত পেয়ে ফুলে যাওয়া মাংস হতে রক্ত পড়তে পারে। 

সাইনাসের প্রদাহ থেকে পলিপাস হতে পারে যাদের ক্রনিক সাইনুসাইটিস রয়েছে। তবে ক্রনিক সাইনুসাইটিস হলে পলিপাস নাও হতে পারে। 

পলিপ কি উভয় পাশে হয়(does polyp occur in both side?)

সাধারণত পলিপ নাকের উভয় পাশে হয়। একপাশে হয় না, একপাশে হলে তা বিনাইন টিউমারও হতে পারে।


পলিপাস মানে প্রদাহ?(Polypus means inflammation?) 

অ্যালার্জি, ইনফেকশন ও প্রদাহের কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পলিপ হয়ে থাকে। তবে পলিপের সাথে ক্ষেত্রবিশেষ কিছু রোগের সংযোগ থাকতে পারে- 

যেমন-

দাতের কোনো ইনফেকশন নাকের সাইনাসে ছড়িয়ে গেলে।

সিস্টিক ফাইব্রোসিস থাকে। 

কেউ যদি অ্যাসপিরিনের প্রতি sensitive হয়। 

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থাকলে।


পলিপাসের লক্ষণ(Symptoms of polypus)

কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখে বুঝতে পারা যাবে আপনার পলিপ হয়েছে কিনা-

১. নাক বন্ধ হয়ে যায়।

২. তখন শ্বাস নিতে কষ্ট হবে

৩. শ্বাসকষ্ট হবে। 

৪. সর্দি, জ্বর ও ঠান্ডা লাগবে 

৫. নাক ভেজা ভেজা থাকা ও পাতলা হওয়া(Runny nose)। 

৬. নাক দিয়ে রক্ত পড়া

৭. স্লিপ অ্যাপনিয়া হওয়া, অর্থাৎ ঘুমের সময় হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং হঠাৎ শ্বাস শুরু হওয়া। এটা একটা sleep disorder. ঘুমানোর পর যদি নিজেকে tired মনে হয় তখন তা স্লিপ অ্যাপনিয়া(sleep apnea) হতে পারে।

৮. নাক দিয়ে শব্দ হওয়া। যেহেতু নাক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। 

৯. খাবারের স্বাদ কম পাওয়া

১০. মাথাব্যাথা হওয়া। 

১১. snoring হওয়া, মানে ঘুমের সময় নাক দিয়ে বাতাস সহজে না বইতে পাওয়া, ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। মাঝেমধ্যে snoring হলে সমস্যা হয় না, তবে দীর্ঘসময় snoring থাকলে হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোক এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

১২. সাইনাসে ব্যাথা হওয়া ও চাপ অনুভূত হওয়া।

নাকের পলিপাস কেন হয়,নাকের পলিপাসের চিকিৎসা,ঔষধ,দূর করার উপায়,নাকের পলিপাসের অপারেশন খরচ,naker polypas er lokhon,কি কি সমস্যা হয়,নাকের মাংস বৃদ্ধি ছবি
নাকের পলিপাসের লক্ষণ
symptoms of nasal polypus

পলিপের চিকিৎসা (Treatment of polyps--)

 পলিপাস হলে নাকের ভেতরের মাংস মূলত ফুলে যায়। এখন এই পলিপের বৃদ্ধি পাওয়া কমানোর জন্য স্টেরয়েড স্প্রে দেয়া হয়।

পিলের মাধ্যমে স্টেরয়েড দেয়া হয়।

ইনজেকশন দিয়ে মেডিসিন দেয়া হয়। 

এছাড়াও ইনডোস্কপির সাহায্যে নাকের ভেতরটা ভালো ভাবে দেখা হয়। 

অর্থাৎ নাকের মাংস বৃদ্ধি প্রতিরোধের ঔষধ হচ্ছে কর্টিকোস্টেরয়েড বা ন্যাসাল স্টেরয়েড 

সর্বোপরি সর্বোচ্চ চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন করে পলিপ বা পলিপাস ছাটাই করা। 

নাকের পলিপাস কেন হয়,নাকের পলিপাসের চিকিৎসা,ঔষধ,দূর করার উপায়,নাকের পলিপাসের অপারেশন খরচ,naker polypas er lokhon,কি কি সমস্যা হয়,নাকের মাংস বৃদ্ধি ছবি


পলিপাস হলে অপারেশন কি করা ঠিক হবে?

জ্বি, ঠিক হবে। পলিপাস হলে অপারেশনের মাধ্যমে তা সারাজীবনের জন্য দূর করা হয়। অন্যান্য ঔষধ বা ট্রিটমেন্ট এর মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হলেও পলিপাস সম্পূর্ণ দূর হয় না। তা পুনরায় ফিরে আসতে পারে। 

তবে অপারেশনের পর সাধারণত পলিপ নির্মূল করা সম্ভব। 

অবশ্যই তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ব্যতিরেকে করা যাবে না। ডাক্তার ঔষধ দিবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর অপারেশনও করতে পারেন। তখন অপারেশন করাই উত্তম। 

নাকের পলিপাস কেন হয়,নাকের পলিপাসের চিকিৎসা,ঔষধ,দূর করার উপায়,নাকের পলিপাসের অপারেশন খরচ,naker polypas er lokhon,কি কি সমস্যা হয়,নাকের মাংস বৃদ্ধি ছবি
নাকের পলিপ বা পলিপাসের অপারেশন ছবি 
nasal polyp operation

পলিপাসের অপারেশন খরচ?

অপারেশন খরচ নির্ভর করে কোথায় অপারেশনটা করা হচ্ছে। facility এর ওপরও অনেক কিছু নির্ভরশীল। 

তবে কয়েক হাজার থেকে কয়েক হাজারের মধ্যেই বিদ্যমান। 

তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঢাকায় গড়ে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার বলা যায় বা তারও কম বলা যেতে পারে। 

পলিপাস কি পুনরায় ফিরে আসে?( does polypus recur? 

অপারেশনের পর সাধারণত ফিরে আসে না, তবে আসতেও পারে। মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা হলে পলিপ পুনরায় ফিরে আসতে পারে। 

তখন কাউকে স্টেরয়েড খেতে থাকতে হয়। 


পলিপাস হলে কখন ডাক্তার দেখাবো? (When to see a doctor)

পলিপাসের যে লক্ষণের কথা বলা হয়েছে তা যদি ১০ দিন বা তার অধিক সময়ে বিরাজ করে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। 

এছাড়াও পূর্বে যাদের কোনো রোগ রয়েছে( যেমন- অ্যাজমা) তাদের সাথে সাথে চিকিৎসকের সাথে দেখা করা উচিত। 

আবার রক্তক্ষরণ হলে(bleeding) হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। 

পলিপ যদি নাক বন্ধ করে শ্বাস নিতে সমস্যা তৈরি করে বা শ্বাসকষ্ট তৈরি করে তখন অপারেশন করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়, তখন ডাক্তার দেখাতে হবে।


পলিপাসের প্রতিরোধ( Prevention of polypus)

১. দূষণমুক্ত এলাকার মাস্ক ব্যবহার

২. যেসব৷ বিষয়ে এলার্জি আছে তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা

৩. সাইনুসাইটিস থাকলে চিকিৎসা নেয়া

৪. অ্যাজমা থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা

৫. যেসব বিষয় নাকে প্রদাহ সৃষ্টি করে তা থেকে দূরে থাকা

৬. হাত ধোয়া নিয়মিত।