ইন্টারনেটে যত ভিডিও প্রতিদিন ডাউনলোড হয় তার ৩৫ শতাংশই হচ্ছে পর্ণ ভিডিও(porn videos)। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রায় ৫৩ শতাংশই পর্ণ ভিডিও দেখে থাকে। তাই বলাই বাহুল্য পর্ণ ভিডিও বর্তমানের ছেলেমেয়েদের কাছে খুবই সহজেই ছড়িয়ে আছে এবং তারা সহজেই তা পেতে পারে। ফলে পর্ণ আসক্তি(porn addiction) বর্তমানে এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে ধরা যেতে পারে।
পর্ণগ্রাফি মানে কি?(what is pornography in bangla)
পর্ণগ্রাফি আসক্তির(porn addiction) কথা বলতে গেলে পর্ণগ্রাফি মানে কি তা বুঝা দরকার। পর্ণগ্রাফি মানে বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে নগ্ন নারী-পুরুষের যৌনমিলনের ভিডিও বা ছবি যা প্রকৃতপক্ষে অবাস্তবিক(fantasy) ও উগ্র(violence) বা নিকৃষ্ট(obscene) বিষয়াবলি।
ঐ স্ক্রিনের দৃশ্যাবলি উগ্রতা ও ভুল যৌনতার বিষয়টির প্রকাশ ঘটায় মাত্র। তবে পর্ণগ্রাফি শুধুমাত্র নোংরা ভিডিও বা অশ্লীল ছবি নয় বরং যেকোনো অডিও, ম্যাগাজিনের গল্প বা সাহিত্য, পডকাস্ট বা gif ও পর্ণগ্রাফি হতে পারে।
পর্ণ আসক্তি কি?(what is porn addiction in bangla)
পর্ণ আসক্তি(porn addiction) কি তা নিয়ে হয়তো অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে। আসলে পর্ণ দেখা হলেই পর্ণ আসক্তি হয়ে যায় না। আসক্তির ব্যাপারটা কিছুটা ভিন্ন যদিও পর্ণ দেখার মাধ্যমেই আসক্তির সূচনা হয়।
পর্ণ দেখা থেকে বিরত থাকা দরকার কারণ পর্ণ দেখার মাধ্যমে আসক্তির সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক ও পর্ণ দেখার মাধ্যমে যৌনতা সম্পর্কে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে দাম্পত্য জীবন বা যৌন সম্পর্কের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে(effects the sex life)। এটি আবার ধর্মীয় ও নৈতিকভাবে গর্হিত কাজ।
তবে পর্ণ আসক্তি বলতে এমন একটি অবস্থাকে বুঝানো হয় যখন কেউ কোনো নির্দিষ্ট সময়ে পর্ণ না দেখতে চাওয়া সত্ত্বেও পর্ণ দেখে এবং তা তার দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। নিজের ওপর তার মেজাজ খারাপ হয় ও নিজের ওপর দোষী(guilty) মনোভাব তৈরি হয়।
অন্যভাবে বলতে গেলে যখন নিজ থেকে পর্ণ দেখা কন্ট্রোল করতে পারবে না তখনই তা পর্ণ আসক্তি এবং তা স্বাভাবিক নিজের নানা কর্ম ও সহধর্মীণীর সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরাবে। আপনি পর্ণ ছাড়তে পারবেন না।
তখন পর্ণ আনন্দের জন্য কেউ দেখবে না বরং নিজের দেখাটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে গেছে বলে সে দেখবে। এটাই পর্ণ আসক্তি।
পর্ণ দেখার জন্য নিজের মধ্যে একটি আকুতি কাজ করা, না দেখতে পারা পর্যন্ত ছটফট করা, দেখার জন্য একটা দুনির্বার আকর্ষণ বা compulsiveness থাকা। সর্বোপরি পর্ণের ওপর একটা আবেগময় নির্ভরতা(emotional dependance) তৈরি হয়। এটা তখন ড্রাগের মতো আপনাকে শেষ করে দেয়।
আসলে যেকোনো ধরনের আসক্তিই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, বরং আসক্তিই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে যার জন্য আমরা হতাশ ও বিষণ্ণ হই। পর্ণ আসক্তির প্রভাবও তেমনি।
এখন আপনি পর্ণগ্রাফি ছাড়বেন কারণ এটা ক্ষতি করে। এখন পর্ণগ্রাফির কি কোনো উপকারিতা আছে? তা জেনে নিন
পর্ণ আসক্তির লক্ষণ(symptoms of porn addiction bangla)
এর বেশ কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা যেতে পারে।
অসময়ে পর্ণ দেখা
পর্ণ দেখায় কেউ অভিষিক্ত হয়ে গেলে সময় অসময়ে পর্ণ দেখা হবে। যদিও আপনি তা দেখতে চাইবেন না কারণ হয়তো ঐ সময় আপনার কোনো অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকবে। কিন্তু আসক্তি আপনাকে বাধ্য করবে তা দেখতে।
সামাজিক জীবনেও অসময়ে পর্ণ
হয়তো আশেপাশে লোকজন থাকা সত্ত্বেও পর্ণ দেখা হচ্ছে। তখন সে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে এবং ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। ফোন লুকাবার চেষ্টা করে। এমন হয় কারণ পর্ণ আসক্তি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
নিজের ওপর কন্ট্রোল হারানো
যেহেতু আপনি আসক্তির কাছে হেরে গেছেন, তাই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবেন না অশ্লীল চিত্রাবলি ও ভিডিও দেখা থেকে।
বিষণ্নতা ও হতাশা
আপনি না দেখতে চাওয়া সত্ত্বেও নোংরা ছবি অর্থাৎ পর্ণ দেখবেন, ফলে এর মাধ্যমে আপনার হতাশা ও বিষণ্ণতা তৈরি হবে। নিজের ওপর রাগ হবে। ফলে চরম দু:খ ও বিষণন্নতাই নিমজ্জিত হতে পারেন।
এছাড়াও পর্ণগ্রাফির ভয়াবহতা অনেক
স্বাভাবিক কাজকর্মে অসঙ্গতি
অতিরিক্ত পর্ণ(porn) দেখার কারণে প্রচুর সময় অপচয় হবে। ফলস্বরূপ স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সমস্যা হবে। ঐ নানা অশ্লীল ছবি ও ভিডিও এর দৃশ্যাবলি মাথার মধ্যে গ্রোথিত হয়ে কাজে বিগ্ন সৃষ্টি করবে। ছাত্ররা পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারবে না।
সহজভাবে দৈনন্দিন কাজকর্মে অসঙ্গতি ও অসামঞ্জস্যতা দেখা দিবে। যা পর্ণের অপকারিতাও বটে।
পর্ণ দেখার সময়টা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা
জঘন্য অভিনয়গুলো দেখতে দেখতে তাতে চরমভাবে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে কখন যে সময় চলে যায় তাতে খেয়াল থাকে না। অতএব পর্ণ দেখার সময় সম্পর্কে সচেতন না থাকা। অনেকটা সোস্যাল মিডিয়া চালানোর মতো। মূলত ব্রেনের ফাংশনের স্থায়ী পরিবর্তন এর জন্য দায়ী।
কেউ পর্ণ ছেড়ে দিতে বললে খারাপ লাগা
পর্ণে যেহেতু আসক্ত হয়ে গেছে তাই এমন একটা মনোভাব হয়ে যায় যে সে পর্ণ দেখার উপকারিতা বা বৈধতা সে খুজে বেড়ায়। গুগলে এর উপকারিতা সার্চ দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা ও প্রশান্তি দেয়। কেউ এর অপকারিতার কথা বললে মনে মনে কষ্ট পায় ও খারাপ লাগে।
সহধর্মিনীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়া
এটাও আসক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। কেউ যদি বিয়ের পরেও আসক্ত হয়ে থাকেন তাহলে নিজ partner এর সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়া বা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। বিয়ে ছাড়াও যদি relationship থেকে থাকে তাহলেও একই কথা প্রযোজ্য।
যেহেতু porn সে সময় অসময়ে দেখবে তাই অনেক সময় নিজ পার্টনারকে সময় দিতে না পারা, বা নিজ মানসিক বিষণ্নতার কারণে পার্টনারের সাথে ভালো সময় না কাটাতে পারা ও মতে মিল-অমিল সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্যাপারটা পার্টনারের কাছ থেকে লুকানো
Pornography তে চরম আসক্তির ব্যাপারটি পার্টনার জানতে পারলে নিজের লজ্জা(shame) হতে পারে, এটা ভেবে তা পার্টনার বা স্বামী/স্ত্রীর কাছ থেকে লুকানো। ক্ষেত্রবিশেষ এর কারণেই ভুল বুঝাবুঝি বা misunderstanding হতে পারে। কারণ আপনার সহধর্মিণী ভাবতে পারে সে হয়তো কিছু একটা লুকাচ্ছে, ফলে সন্দেহ জন্মাতে পারে।
এভাবে সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্কে ফাটল ধরে।
পর্ণ আসক্তির(porn addiction) কারণে সময়-অসময়ে মোবাইল চালানো অভ্যাস হয়ে যায়। |
যৌন জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
পর্ণ আসক্তি(porn addiction) একটা ভ্রান্ত যৌনতা সম্পর্কে ধারণা দেয় যার সাথে বাস্তবতার মিল নেই। পর্ণ দীর্ঘদিন যাবৎ দেখার কারণে কোনো ব্যক্তি সেই অবাস্তবিক অশ্লীল কর্মকান্ড তার স্বামী/স্ত্রীর সাথে করতে চাইবে বা ব্যাপারটা fantasize করবে।
এটা করতে গেলে ঝামেলা হবে কারণ বাস্তবে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। এতে সম্পর্ক নষ্ট হয়। তখন স্বাভাবিক sex তার পছন্দ হবে না।
অর্থাৎ পর্ণ দেখার কারণে সহধর্মিণীর সাথে সম্পর্ক নষ্ট হওয়াটা পর্ণ আসক্তির একটি লক্ষণ ও অপকারিতা।
সামাজিক নানা অনুষ্ঠান ও বন্ধুদের সাথে আড্ডায় না যাওয়া/ বাসায় একা থাকা
ভিডিও দেখতে দেখতে এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে যখন সমাজের নানা অনুষ্ঠান পরিহার করে বাসায় থাকাটা সে প্রয়োজন মনে করবে। এমনকি বন্ধুদের সাথে আড্ডায়ও সে যাবে না।
এই লক্ষণটিও অনেকের দেখা যায়।
নিজের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও তা দেখতে থাকা
যখন আসক্তির ভয়াবহ ক্ষতি সম্পর্কে সে জানে তবুও দেখা ছেড়ে দিতে পারে না।
অর্থাৎ পর্ণ দেখা ছেড়ে দিতে না পারাই মূলত পর্ন আসক্তির (porn addiction)মূল লক্ষণ।
কারো মধ্যে উক্ত লক্ষণগুলোও কোনো একটি থাকলেই এখনই সর্তক থেকে নিজের যৌন স্বাস্থ্য(Health) ঠিক রাখর জন্য পর্ণ দেখা পরিহার করুন।
আরো পড়ুন-
পর্ণগ্রাফি ছাড়ার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ
0 Comments